স্কুল বিল্ডিং জলের তলায়, অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা স্কুলে

স্কুল বিল্ডিং জলের তলায়, অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা স্কুলে। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের দমকল পীরখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে বহু দিন ধরে। সাপের উপদ্রব ও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুলে অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা হয়েছে। স্কুলের কচিকাঁচারা এখন পূজার ছুটির শেষ হওয়ার অপেক্ষার দিন গুনছে না। তারা অপেক্ষা করছে কবে জল নামবে সেই দিনের। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হওয়ায় জল সরছে না দীর্ঘ দিন ধরে। রাস্তা সংস্কারের জন্য কয়েক বছর ধরে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুর-২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে ওই স্কুল ১৯৫৩ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। বর্তমানে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়। শিক্ষক মাত্র ২ জন। স্কুলের দোতলা ভবনের নীচের দু’টি ঘরে এবং উপরের একটি ঘরে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করে পড়ুয়ারা। মাসখানেক আগে টানা বৃষ্টিতে জল জমে ছিল স্কুলের সামনে। কিন্তু এখনও সেই জল নামেনি। বহু দিন ওই জল কাদা পেরিয়েই স্কুলে এসেছে কচিকাঁচার দল। জল ঢুকেছে ক্লাসে, মিড-ডে মিলের রান্না ঘরে, শৌচাগারে। কোনও রকমে সেখানেই চলছিল পঠনপাঠন। কিন্তু জলের মধ্যে বিষাক্ত সাপ ঘুরে বেড়াতে দেখে আর স্কুলে আসতে চাইছে না পড়ুয়ারা। স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বহু পুরনো। আগে নিকাশি সমস্যা ছিল না। বছর দশেক আগে স্কুলের পাশের রাস্তা উঁচু করে ইটের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তারপর থেকেই জল নামতে দেরি হয়। স্কুলের পাশে দিয়ে রায়দিঘি থেকে দমকল ঘাট পর্যন্ত যাতায়াতের সরু রাস্তাটি এক সময়ে মাটির ছিল। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ওই রাস্তা কেটে বিদ্যালয়ের মাঠে জমা জল জল বের করা হতো। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই রাস্তায় মাটি ফেলে উঁচু করে বর্তমানে পিচ রাস্তা তৈরি হয়েছে। ফলে নিকাশি বন্ধ। আগে স্কুলের পিছনের দিক দিয়ে জল নেমে যেত নিচু এলাকায়। সেখানে আবার মাটি ফেলে উঁচু পাড় তৈরি করায় সে দিকেও আর জল বেরোতে পারে না। ফলে বর্ষা শুরুর পর থেকে পরবর্তী ৪-৫ মাস স্কুলের যাতায়াতের রাস্তা, মাঠে কোমর সমান জল জমে থাকছে। কয়েক বছর ধরে স্কুলের জল‌ নিকাশি পথ না থাকায় আশপাশের পুকুর খাল বিলও জল থৈ থৈ করে। বিষধর সাপ ক্লাসঘরে বা শৌচাগারে আশ্রয় নিয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। কচিকাঁচারা তাতে আঁতকে উঠলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের আর কী বা করার থাকতে পারে! স্কুলের মধ্যেও বড় বড় সাপের উপদ্রব হয় হামেশাই। আবার, মাসের পর মাস জল জমে থাকায় পচা দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাতে অতিষ্ঠ শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী সকলেই। পানীয় জলের নলকূপ বা শৌচাগারে পৌঁছতে হলে জল-কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। তাই শৌচাগার ব্যবহার প্রায় বন্ধ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জিব হালদার এক রকম অসহায় ভাবে বললেন, ‘‘আমি আর কী করতে পারি! বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা দফতর থেকে স্থানীয় ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে সকলেই উদাসীন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা ভুল বুঝে তাঁর উপরেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিকে, টানা ছুটির কারণে সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারা। মথুরাপুর-২ বিডিও রেজওয়ান আহমেদ তিনি জানান "স্কুলটির সমস্যা দীর্ঘদিনের, স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। আমার পরিদর্শক টিম ইতিমধ্যেই স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। এবছরের মধ‍্যেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ মন্ডল জানান স্কুলের এই সমস্যা দীর্ঘ ১৪- ১৫ বছরের। বিভিন্ন সময়ে বিডিওরা পতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বর্তমান বিডিও নগেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতকে একটি স্কিম তৈরী করতে বলেছেন। একটি চ‍্যানেল তৈরী করে এককিলোমিটার দূরে খালে জল ফেলা হবে। ব‍্যায় হবে আনুমানিক ১১ লক্ষ্য টাকা। বর্তমানে চারিদিকে জল জমে আছে বলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। জল নামলেই আশা করা যায় কাজ শুরু হবে।
Copyright © 2025 politicalberg. Designed by OddThemes